এনটিআরসিএ’র তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জানুয়ারিতে

এনটিআরসিএ’র তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জানুয়ারিতে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেছেন, প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের তালিকা নেওয়া হবে। এছাড়া এনটিআরসিএ রিভিউ করেছে। আশা করছি জানুয়ারিতে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া সম্ভব হবে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পরীক্ষায় কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি ও মামলা জটে আটকে আছে এসব নিয়োগ। গত তিন বছরে কারো নিয়োগই হয়নি। এরই মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। সময় যত গড়াবে, চাকরিতে প্রবেশের যোগ্যতা হারাবেন অনেকেই। এ কারণে প্রার্থীরা চিন্তিত, শঙ্কিত। যদিও দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে ও মাদ্রাসায় ৮০ হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকসংকটে শিক্ষার মানও নেমে যাচ্ছে।

২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করে এনটিআরসিএ। এ পর্যন্ত মোট ১৫টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এনটিআরসিএ আয়োজন করলেও নিয়োগ চূড়ান্ত করছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। এই নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএকে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষক চাহিদা পাঠানো হয় এনটিআরসিএতে। সেখান থেকে নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হয় প্রতিষ্ঠানে। সে তালিকা থেকেই শিক্ষক নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এখন শুধু শিক্ষকের নিয়োগপত্র জারি করে।

এ পর্যন্ত দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক। এখন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির অপেক্ষায় এনটিআরসিএ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম থেকে ১৫তম নিবন্ধিত মেধাতালিকায় ৬ লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮২১ জনের বয়স ৩৫ বছর পার হওয়ায় তারা নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার অনেকে বিভিন্ন চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। গণবিজ্ঞপ্তির জন্য নভেম্বর পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৩৬০টি এবং এখন পর্যন্ত নতুন প্রায় ২২ হাজারসহ প্রায় ৮০ হাজার শূন্যপদের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীরা অপেক্ষা করছেন। গত জানুয়ারি মাসে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা হয়নি।

শান্ত নামে এক প্রার্থী বলেন, লক্ষাধিক নিবন্ধিত বেকার শিক্ষক নানা দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আজ আমরা অবহেলিত। অনেকের বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে। ফলে তারা আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতেও সরকারি বিভিন্ন নিয়োগের ফলাফল, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এমনকি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশই আমাদের একমাত্র দাবি।

প্রতি বছরই সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও গেল তিন বছরে একজন শিক্ষকও নিয়োগ দিতে পারেনি তারা। জানা গেছে, ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। নিবন্ধিত প্রার্থীদের ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে নেওয়া এনটিআরসিএর ১৩তম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ চাকরি প্রার্থীর মধ্যে থেকে শূন্যপদের অনুকূলে ১৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থীকে পিএসসির আদলে তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করে এ প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রণালয় তাদের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় রায় তাদের পক্ষে গেলে ঐ শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু এনটিআরসিএ নিয়োগ না দিয়ে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে।

এ ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু কোর্টের রায়ে সমন্বিত মেধা তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, তাই শুধু ১৩তম ব্যাচের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গেলে তা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে এখন সমন্বিত মেধা তালিকার মধ্যে সবাই প্রবেশ করেছে। এ জন্য আমরা রিভিউতে বলেছি একটি ব্যাচকে নিয়োগ দিলে বাকিরা মামলা করতে কোর্টে যাবে। বিষয়টি নিয়ে রিভিউ আবেদন করেছে এনটিআরসিএ। রিভিউ রায়ের ওপর নির্ভর করছে এনটিআরসিএ কী করবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন